বেড়াতে গিয়েও ভূতের খপ্পর - প্রথম পর্ব
Tour Planner Group এ প্রশ্ন করা হয়েছিল, "ঘুরতে গিয়ে ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন কখনো? এই কন কনে শীতে রাত জমে যাবে!" সেখান থেকে একটা আইডিয়া আসে! সব বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞেস করলাম তাদের অভিজ্ঞতার কথা। কেউ কেউ শেয়ার করল! তাদের গল্প আর কিছু কিছু সেই পোস্টের বাছাই করা কমান্ট সেভ করে রেখেছিলাম। সেগুলো শেয়ার করছি…
প্রথম গল্প
আমার অভিজ্ঞতা টা একটু অন্য রকমের।
আমার মামিমা, থাকতেন জোড়া বড়বিল , ওড়িশা তে কারণ মামা tisco তে কর্মরত ছিলেন, আমৃত্যু।
মামিমা , hypertension এবং কিডনি failure এ
গত হয়েছেন। ক্রিয়াকর্ম র দিন রাত্রে ওঁর প্রিয় খাবার মাটন মসলা আর ভাত সঙ্গে মিষ্টি নিয়ে।
মহা নদীর পাড়ে আমরা তিন ভাই মানে ওনার দুই ছেলে আর আমি সঙ্গে একজন মুস্কো লোকাল ছেলে আর পুরোহিত মশাই দিতে গেছি।
বর্ষার সময় পাহাড়ি নদী খরস্রোতা, কোনো লাইট নেই । হাতে আলো বলতে টর্চ আর মোমবাতি ।
যথারীতি কলাপাতায় দান করা হলো। প্রসঙ্গত হলে রাখি মামিমা র আরো বেচেঁ থাকার ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষা ছিল। ৫৫ বছরে চলে গেছিলেন।
পুরোহিত বললেন খাবার দিয়ে কেউ পিছনে তাকাবেন না আর কোনো প্রিয় জনের মত ডাক পেলেও না। অন্যথা অনর্থ হয়ে যাবে।
ঠিক কাজ টা শেষ করে ফিরছি অন্ধকার ঝিরঝির বৃষ্টি, বাতাস মেঘ ডাকছে। অশরীরীর উপস্থিতি অনুভব করছি আমি। এমন অবস্থায় হটাৎ ওই বন্ধুর এবর খেবড়ো রাস্তায় মোমবাতি টর্চ সব নিভে গেলো। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত অনুভব করলাম। পিছনে কেউ দাড়িয়ে বুঝলাম কিন্তু উপায় নেই ফিরে দেখার। সেই মুষ্ক ছেলে সঞ্জয় আমার হাত টা ধরে বললো কিছু হবে না ভাই আমি আছি।
আমরা এসব অভ্যস্ত। ব্ল্যাক ম্যাজিক ওড়িশার একটা profession। কিন্তু আমার ছোট দাদা পিছন ফিরে তাকালো আর মা বলে ডেকেছিল।
কিন্তু তার ঠিক পরের বছর ছোট দাদার বাইক অ্যাকসিডেন্ট এ মৃত্যু হয় বা murder বুঝতে পারি নি। আর সঞ্জয় নামের ছেলেটি তার ঠিক এক বছর পর একই জায়গায় বাইক কে ট্রাক পিষে দিল।
এখন ও বুঝতে পারি নি সেই অদ্ভুত ঘটনার সত্যতা।
তবে আমি কিন্তু বিশ্বাস করি অলৌকিক শক্তি আছে তবে এই শক্তি গ্রাম, অন্ধকার, মানব সভ্যতার থেকে দূরে। আত্মার মুক্তি হয় না যদি বাসনা চরিতার্থ না হয়।
বাদবাকি বিশ্বাস মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
দ্বিতীয় গল্প
এক মারোয়ারি ছেলেকে পড়াতে যেতাম, বিশাল বাংলো বাড়ী। রোজ নিচের পড়ার ঘরেই পড়াতাম, একদিন গিয়ে দেখি ছেলেটি ফেরেনি, আমায় একজন দোতালায় ওর বেডরুমে বসিয়ে চা দিয়ে চলে গেলো, সারা দোতলায় আর কেউ ছিল বলে মনেহয় না। কিছু সময় পরে শুনি পাশের ঘরে ঘুঙুর পরে কেউ ঘুরে ঘুরে নাচার আওয়াজ, একবার খুব কাছে আবার আস্তে আস্তে দুরে চলে যাচ্ছে, ভয়ে আমি রাম নাম জপছিলাম। বেশ কিছু সময় পরে ছেলেটি যখন এলো আর কোন আওয়াজ পাইনি। ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করায় এড়িয়ে গেছিল, ওর বোন কে একজন পড়াতো, মেয়েটি বলেছিল ওরাও শোনে তবে কোন প্রবলেম হয়না। ওদের বাগানের পাতা কেউ ঝাঁট দিয়ে দিতো, কিন্ত দারোয়ানরা কাউকে ঢুকতে বেরোতে দেখতো না।
তৃতীয় গল্প
অনেক ছোটবেলায় লখনৌতে ভুলভুলাইয়া দেখতে গিয়ে একবার অসম্ভব আনমনা হয়ে পড়ছিলাম। মা, বাবা, মাসি, মেসো, ভাই সবাই গাইডের কথামতো যাচ্ছে, আমি খালি উল্টোপাল্টা দিকে চলে যাচ্ছিলাম। মা খুব বকছিল, ভাবছিলো আমি ইচ্ছে করে পাকামি করছি। কিন্তু সত্যি আমি দিক, সময় কিছুই খেয়াল করতে পারছিলাম না। সবার কথা কানে যাচ্ছিলো, কিন্তু কিছুই ঠাহর হচ্ছিলো না। গাইড বাবাকে বলেছিলেন "বেরিয়ে আসুন মেয়েকে নিয়ে", তারপর বলেছিলেন অনেকেরই এরকম হয়। তবে আমার মনে হয় claustrophobia থেকে একটু brain-freeze হয়েছিল।
আমার একটা ছোট অভিজ্ঞতা হয়েছিল তিনচুলে ঘুরতে গিয়ে। আমি আর আমার এক বন্ধু একটু বেশীই দুঃসাহস দেখিয়ে প্রচণ্ড ঝোড়ো আবহাওয়ার মধ্যে রাত ১০ টা নাগাদ পাহাড়ি জঙ্গল লাগোয়া রস্তায় হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম।তখন সদ্য মুষলধারে বৃষ্টি শেষ হয়েছে সবেমাত্র। চারিদিক একদম নিকষ অন্ধকার। দুদিন ধরে ইলেকট্রিসিটি নেই। মোবাইলের টর্চে আমরা আমাদের দু ফুট সামনের রাস্তা টুকুই দেখতে পাড়ছিলাম শুধু। এতো বৃষ্টি হয়েছিল যে চারিদিক গাঢ় কুয়াশায় ঢেকে গেছিল। আমরা পাইন ফরেস্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ ই কাঁচা মাছের গন্ধ পাই। অথচ ওখানে মোটামুটি দু তিনশ মিটারের মধ্যে কোনো বাড়ি ছিলো না। রাস্তার একদিকে ছিল পাইন গাছের জঙ্গল আর এক দিকে ছিল পাহাড়ের ঢাল। ওরকম জায়গায় হঠাৎ করে কাঁচা মাছের গন্ধ পাওয়াটা আমাদের কাছে খুবই অদ্ভুত লেগেছিল।
গতবছর অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে আমরা চার বন্ধু মিলে সিমলা মানালি ঘুরতে যাই। তো সেদিন আমরা মানালির যোগিনী ওয়াটার ফলস ট্রেকিং করে ফিরছিলাম। যাবার বেলায় ওঠার জন্য যে রাস্তাটি নির্দিষ্ট ছিল, সেখান দিয়েই উঠেছিলাম। আমাদের আগে পরে আরও কয়েকজন ছিলো। আসল গল্পটা ফেরার সময়। ঘন্টা দেড়েক ট্রেক করে তখন খিদেতে পেট যাকে বলে একেবারে চুঁইচুঁই করছে। যখন নেমে আসছি, আমাদের মনে হলো এত ঘুরে ঘুরে নামার কোন মানে হয় না। মনে মনে একটা ক্যালকুলেশন করলাম। নিজেরাই ঠিক করলাম আমরা যদি খাড়া সোজা নামতে পারি , তাহলে পথ বেশ খানিকটা কমে যাবে এবং সময়ও বেঁচে যাবে । সোজা নামতে গিয়ে কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম একেবারে খাড়া নামা সম্ভব নয়। তাই নামতে নামতে একটু একটু করে চলার পথ কখন যেন বেশ খানিকটা বেঁকে গেছে। আর ধীরে ধীরে পাহাড়ের গায়ে পাইন, ফারের ঘনত্ব বাড়তে থাকলো। এবার শুরু হলো একে অপরকে দোষারোপের পালা । কে প্রথম এই রাস্তার সন্ধান দিলো তাকে যখন খোঁজার মরিয়া চেষ্টা চালাতে চালাতে নেমে আসছি তখন হঠাৎ Sabeer H Mallick বলে উঠলো," ওটা কী ? " তারপর আঙুল দিয়ে যা দেখালো তাতে আর একটু হলেই হার্টফেল হবার যোগাড় হয়েছিল। একটু দূরে তাকিয়ে দেখি এলোমেলো চুলের একটা ফুটফুটে পুতুল চুপ করে বসে আছে। ঠিক যেন অ্যানাবেলা!! কে একজন বলে উঠলো," এটা পাহাড়ি কিচকান্ডি!" হঠাৎ করে সেই পুতুল দেখি আমাদের গলার আওয়াজ পেয়ে পুরো নব্বই ডিগ্রী গলা ঘুরিয়ে আমাদের দেখছে । এবার আমাদের হার্টফেল হতোই যদি না পরের মুহূর্তেই পুতুলের মা বাবাকে আমরা না দেখতে পেতাম। আসলে হয়েছিল কী , পুরো জট পাকিয়ে যাওয়া একমাথা চুলের এক বিদেশি গাছের একপাশে বসে ছিল, আর অন্য পাশে তার সঙ্গীনি গাছতলায় শুয়ে ছিল এবং মায়ের পাশে সেই ফুটফুটে অ্যানাবেলার মতো পুতুল মেয়েটি বসে ছিল। কিন্তু আমরা গাছপালার আড়ালের কারণে কিছুক্ষণ শুধুমাত্র পুতুল মেয়েটিকেই দেখতে পাচ্ছিলাম। ঐ নির্জন পাহাড়ে ওরা কী করছিলো কে জানে! তারপর তো আমাদের ভীষণ সাহস! একেবারে সেলফির আব্দার করে বসলাম। তবে সেই ভৌতিক পরিবার আমাদের অনুরোধ তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দেয় । যাইহোক শেষে লুকিয়ে দু'একটা ছবি তুলেছিলাম। তবে ভরদুপুর বেলা সেদিন ঐ পাহাড়ি জঙ্গলে যে ভয় পেয়েছিলাম সত্যি সত্যি ভুত দেখেও অত ভয় পাবো কিনা জানিনা। ভুত না দেখেও সেদিন যে গা ছমছমে ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা আজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে
Comments
Post a Comment