বিপন্ন বাস্তুতন্ত্র-ধরাশায়ী 'দামোদর


বিপন্ন বাস্তুতন্ত্র-ধরাশায়ী 'দামোদর'




শীতের আমেজে পিকনিক হোক বা পক্ষীপ্রেমীদের পাখি দেখাদক্ষিনবঙ্গের হুগলী বর্ধমান জেলার মানুষের কাছে একটি খুবই পরিচিত জায়গা দামোদরের চর। বর্ষায় দামোদরের আশঙ্কার ছবি দেখা গেলেও শীত আসার আগেই ধীরে ধীরে এই নদ তার ভয়ঙ্কর রূপ ছেড়ে কোমল রূপ ধারন করে। ভারি বর্ষায় নদীর জলে আশেপাশের জমি হয়ে ওঠে খুবই উর্বর । তাই হয়তো 'সোনার ফসল' দানের পাশাপাশি শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের জন্য জায়গা হয়ে ওঠে এক অণণ্য স্বর্গ। 


টেসমেরিক'স  স্টিন্ট



স্মল প্র্যাটিনকোল



ক্লেনটিশ প্লোভার


প্রাক শীতের সময়  থেকেই প্রচুর পর্যটক হাজির হয় এখানে। চলে দৈনিক পিকনিক বা স্বেচ্ছায় প্রকৃতির সাথে কিছুটা সময় কাটানো। এই নদ চায় সবাইকে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে, তার কোলের সবাই কে অকৃত্রিম আনন্দ দিতে, আর পাখপাখালিকে শান্তির শ্বাসবায়ু প্রদান করতে। এত কিছু পাওয়ার পরও কি সভ্য সমাজ সত্যিই তার প্রতি সহানুভূতিশীল? 

মানুষের নৈতিক বোধের অভাবের কারণেই আজকাল এই নদের বেশ দুঃখ। স্থানে স্থানে চলছে চর থেকে বিনা অনুমতিতে বালি তোলার কাজ,তারই পাশে বয়ে চলেছে দামোদরের সংকীর্ণ জলধারা, তার পাড় ভেঙেছে বেশ অনেকখানি, একটা দিক বেশ ভালোই ধুঁকছে; সে ব্যাপারে কি আর খোঁজ নেওয়ার জো আছে কারুর? এই অবস্থা আরও চলতে থাকলে কী আর পাখি থাকবে এখানে? অবহেলা করলে পিকনিক করার মতো জায়গাটাও জুটবে না যে।

এবার থেকে তাহলে একটু সবাই মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই দামোদর কে বাঁচাতে, পিকনিকের পর থালা-গ্লাস-বাটি গুলো ছড়িয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে নাই বা দিলাম। প্লাস্টিকের বোতলের ছোবলে আজ সে জরাজীর্ন, জলের উপরে ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য কাগজের গ্লাস। দিন কে দিন বেড়েই চলেছে তার দৈনদশা।                     

এখনই এর থেকে বাঁচার উপায় না বেছে নিলে ঘনিয়ে আসবে বিপদ, বিঘ্নিত হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পর্যটক হওয়ার পাশাপাশি সামান্য দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলে হয়তো এই দিন আর দেখতে হবে না আমাদের। নদের জলে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপণ কমানো, পিকনিকের পর খাবার উচ্ছিষ্ট সহ আনুসাঙ্গিক আবর্জনা আলাদা জায়গায় জমা করে পরিবেশ রক্ষা করার মতো কাজ গুলি আমরা অনায়াসেই করতে পারি। স্থানীয়দেরও নিতে হবে চরের ধারে বৃক্ষরোপণের মতো মহান কর্ম দ্বারা এখানকার সামগ্রিক ভারসাম্য ফেরানোর মতো গুরুদায়িত্ব। এটুকু সচেতনতার মাধ্যমেই আশা করি  আবার নতুন রূপে ফিরে পাওয়া যাবে জীববৈচিত্র্য, আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে “Sorrow of Bengal” ।

অরিয়েন্টাল স্কাইলার্ক



লিটল রিঙ্গড প্লোভার

কি দেখবঃ 👉যারা পাখি দেখতে চান; সেখানে Black-Winged Stilt, Small Pratincole, Little Egret, Kentish Plover, Osprey, Black kite এর মতো নানা প্রজাতির ছোটো-বড়ো পাখি দেখতে পাবেন| নদীর পাড় ঘেঁষে চোখে পড়বে বেশ কিছু মাটির কোটো আর সেখানে 'বাঁশপাতি'র মতো অজশ্র মন কেড়ে নেওয়ার মতো পাখির বাসা। এছাড়া পাওয়া যাবে প্রচুর 'হাটিটি' পাখি, যারা নদের পাড়ে আসে ডিম পাড়তে। এই সমস্ত পাখিগুলি সাধারণত জল দিয়ে বয়ে যাওয়া মাছ এবং ছোট মেরুদন্ডহীন প্রানীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এদের জন্যই আপাতত সুস্থ আছে দামোদর চর, রক্ষা পাচ্ছে জলাভূমির বাস্তুতন্ত্র।

👉গ্রাম্য পরিবেশে চারদিকটা ঘুরে নিতে বেশ ভালই লাগবে সবার, নৌকাবিহার করেও পর্যটকেরা কাটিয়ে দিতে পারেন বেশ কিছুক্ষণ।


কিভাবে যাবঃ👉 হাওড়া থেকে বর্ধমান কর্ড লাইনের লোকাল ট্রেনে পাল্লারোড স্টেশন আর সেখান থেকে টোটো করে দামোদরের চর। 

👉বর্ধমান মেন শাখার স্টেশন শক্তিগড় হয়ে বা সড়কপথে শক্তিগড় থেকে বড়শুল হয়ে এখানে আসা যায়।

 




তথ্য ও চিত্র সৌজন্যে👉- অর্পণ সেনগুপ্ত






    



Comments

Popular posts from this blog

বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য এবং ভূতুড়ে রাত্রিযাপন

১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

প্রাক বর্ষার 'বক্সা'